ঝুঁকির ক্ষেত্রে অগ্নিবীমা ব্যবস্থাপনা – পাঠটি “বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা” বিষয়ের “ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা” অধ্যায়ের একটি পাঠ। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বীমাগ্রহীতার ব্যক্তিগত বিবরণ : নৌ-বীমার মতই অগ্নিবীমার ক্ষেত্রেও বীমাকারীকে সম্ভাব্য বীমাগ্রহীতার নাম, ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হয়। কেননা, এ ক্ষেত্রে সমধিক প্রতারণা ও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
Table of Contents
ঝুঁকির ক্ষেত্রে অগ্নিবীমা ব্যবস্থাপনা
বীমাচুক্তির বিষয়বস্তুর বিবরণ :
প্রস্তাবিত বীমাচুক্তির বিষয়বস্তু কি -কি তার বাজার মূল্য, তার আয়ুষ্কাল কত, কি তার প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে বীমাকারীকে জেনে নিতে হয়। কেননা, বীমার বিষয়বস্তু হতে পারে একটি কারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক গৃহ, গুদাম, জাহাজ ইত্যাদি।
আবার, এমনও হতে পারে যে – গুদাম নয়, গুদামজাত পণ্য – জাহাজ নয়, তার পণ্যসামগ্রী অথবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ইমারত, গৃহ, এলাকা ইত্যাদি নয় বরং তার পণ্য দ্রব্যাদি। সুতরাং, বিষয়বস্তু ও তার প্রকৃতি বুঝেই হবে ঝুঁকি নির্ধারণ এবং চুক্তি গঠন। বিষয়- বস্তু যদি হয় কোন দাহ্য পদার্থ – তাহলে, স্বাভাবিক কারণেই তার ঝুঁকি হবে তুলনামূলকভাবে অধিক। এ কারণেই বীমাকারীকে এ বিষয়ে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
এলাকা বা অবস্থান :
বীমাকারীকে অবশ্যই জেনে ও দেখে নিতে হবে, বীমার বিষয়-বস্তুটি কোথায় এবং কিভাবে চুক্তিকালীন বা অব্যবহিত পর মেয়াদ অবধি অথবা উদ্দেশ্য সাধন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকরে। চুক্তির বিষয়বস্তুটি যদি হয় একটি কারখানা আর, তা যদি হয় একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং তদুপরি, এলাকার লোকজন যদি হয় দুর্ধর্ষ অথবা অসৎ প্রকৃতির তাহলে যে,
ঝুঁকির পরিমান সমধিক হবে – সেতো সন্দেহাতীতভাবে গ্রাহ্য। সুতরাং, এ বিষয়ে বীমাকারীকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
রাজনৈতিক অবস্থা :
গোলাযোগপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে যতটা ঝুঁকি থাকে, শাস্ত ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থায় তেমনটি নয়। সুতরাং, এ বিষয়টি বীমাকারীর জন্যে নিঃসন্দেহে গুরুত্ব সহকারে বিবেচ্য।
বিবিধ :
উপরোক্ত বিষয়সমূহ ছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে যে সম্পর্কে বীমাকারীকে সাবধান হতে হয়। যেমনঃ ——
(ক) বীমাগ্রহীতা বা বীমাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের বীমাচুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুষ্ঠু কোন পরিকল্পনা আছে কিনা ;
(খ) তাদের শিক্ষা ও দায়িত্বশীলতা কোন স্তরে,
(গ) এলাকায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ কতটা, (ধ) তাপমাত্রা কিরূপ,
(ঙ) গুদাম,, কারখানা ইত্যাদি নির্মাণ কাঠামো, অগ্নি নির্বাপক যানবাহন রয়েছে কিনা এবং চলাচলের সুবিধা রয়েছে কিনা, দাহ্য বস্তু গুদামজাত বা পরিবাহিত হচ্ছে কিনা, (জ) দ্রুত আগুন ছড়ানোর মত অবস্থান কিনা,
(ঝ) কতটা সময়ের জন্যে বীমা করতে চাওয়া হচ্ছে, (ঞ) কি উদ্দেশ্যে বীমা চুক্তি করা হচ্ছে,
(ট) কি ধরনের বা কতটা বীমাদাবী প্রত্যাশা করা হচ্ছে ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে বীমাকারীর সতর্ক পূর্ব-ধারণা নিতে হয়।
- উপরোক্ত বর্ণনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে – যে কোন ধরনের বীমাচুক্তি গঠনের ক্ষেত্রেই বীমাকারীকে সুনির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় কতকগুলি বিষয় সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় অন্যথায়, বীমাকারীকে অবধারিত ও সমূহ ক্ষতির শিকার হতে হয় যা তার বিফলতাকেই স্বাগত জানায়।
মানুষের জীবন ও সম্পত্তি যে সকল ঝুঁকির সম্মুখীন (The risks that human being face for life and property ):
এরূপ একটি প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর বর্ণনা এতই দীর্ঘায়িত হতে পারে যে, তা কোন সাধারণ প্রশ্নোত্তর পরিসরে সংকুলান সম্ভব নয়। কেননা, শুধু মানুষের জীবনেই এতসব ঝুঁকি বিদ্যমান যে, জীবনের জন্যে অজস্র বীমাপত্রের উদ্ভব ঘটেছে; ঠিক একইভাবে মানুষের সম্পদ-সম্পত্তির প্রকরণ ও বৈশিষ্ট্য এতই বিভিন্ন যে, তাতে ঝুঁকি বিদ্যমান থাকে বহু বিচিত্র ধরনে এবং সে কারণে অদ্যাবধি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ও দেশে সম্পদ-সম্পত্তির জন্যে প্রায় অপরিমেয় সংখ্যক বীমাপত্রের উদ্ভব ঘটেছে।
আর, ঝুঁকির শ্রেণী-বিন্যাস বা প্রকরণ প্রতিপাদন প্রকৃতপক্ষেই একটি দুরূহ কাজ। তাছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিপদ-বিপর্যয়কে ঝুঁকি হিসেবে কিছুটা ভ্রমাত্মকভাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই, স্থানিক প্রয়োজনে নিম্নে কেবলি একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা সন্নিবিষ্ট করা হলো ( উল্লেখ্য যে, ঝুঁকির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট অনুযায়ী শ্রেণী-বিন্যাস আগেই দেখানো হয়েছে – তবে, মানুষের জীবন ও সম্পদ-সম্পত্তি যে সব বিপদ-বিপর্যয় ও আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন এখানে তারই প্রেক্ষিতে ঝুঁকির প্রকরণ দেখানো হলো) : –
আরও পড়ুনঃ