আজকের আলোচনার বিষয় “জীবনবীমা কর্পোরেশন” যা বীমা সংক্রান্ত কিছু বিষয় অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।পৃথিবী জুড়ে কর্মক্ষম মানুষের অকালে কর্মক্ষমতা হারানো বা মৃত্যুবরণ এবং সম্পদ-সম্পত্তি বিনষ্ট হওয়ার এক অনাকাঙ্খিত বিপদাশঙ্কা ও গভীর অনিশ্চয়তা দ্বারা সভ্যতার আদি থেকেই মানুষ তাড়িত হয়ে এসছে নিরন্তর।
জীবনবীমা কর্পোরেশন
আর, সে বিপদাশঙ্কা বা অনিশ্চয়তা থেকে অব্যাহতি পেতে এবং নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা লাভের দুর্ণিবার আকাঙ্খায় মানুষ পন্থা সন্নিধানে ছুটে চলে অবিরাম। তারই ফলশ্রুতিতে, কালক্রমে সে এক চমৎকার পন্থা খুঁজে পায় যা বীমা ব্যবসায় নামে আখ্যায়িত ও পরিচিত আজ। জীবনহানি বা কর্মক্ষমতাহানিজনিত বিপদকে কাটিয়ে ওঠার জন্যে যে বীমা ব্যবস্থা, তাকে জীবন বীমা এবং সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যে বীমা ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাকে সম্পত্তি বীমা বলা হয় ( যা এখন সাধারণ বীমার অন্তর্গত)।
আমাদের এ ভূ-খণ্ডে স্বাধীনতার আগেই বেশ কয়েকটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত ছিল। ৭৫টি বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা ও অন্যান্য বীমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ বীমা (জাতীয়করণ) আদেশ, ১৯৭২ [The Bangladesh Insurance (Nationalisation) Order. 1972] শিরোনামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির ১৫ নং আদেশ বলে বাংলাদেশ সরকার সকল বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
উক্ত আদেশ বলেই ৭৫টি বীমা প্রতিষ্ঠানকে ৫টি সংস্থা বা কর্পোরেশনভুক্ত করা হয়। এগুলো হল (১) বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন, (২) কর্ণফুলী বীমা কর্পোরেশন, (৩) তিস্তা বীমা কর্পোরেশন, (৪) সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং (৫) রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বীমা কর্পোরেশন অধ্যাদেশ ( Insurance Corporation Ordinance, 1973) বলে উক্ত ৫টি কর্পোরেশনকে (১) জীবন বীমা বীমা কর্পোরেশন ও (২) সাধারণ বীমা কর্পোরেশন নামে দু’টি প্রতিষ্ঠানে সামিল করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জীবন বীমার উপর সকল কার্যক্রম বা ব্যবসায় পরিচালনা ও নির্য, জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। মোট কথা, বাংলাদেশে পতাকারী মালিকানায়, জীবন বীমার উপর তো প্রতিষলার জন্যে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিই হচ্ছে জীবন বীমা কর্পোরেশন | Life Insurance Corporation) |
‘জীবন বীমা কর্পোরেশন অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন অগ্রগতি। সম্ভাবনার পথে রয়েছে। বিশেষতঃ বিশ্বত বর্ষে । (১৯১৯২০ সালে)। জীবন বীমা কর্পোরেশন ১৯৯১ সাল তথা পেছনের বছরগুলোর তুলনায় লক্ষ্যযোগ্য সাফল্য ও অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা যায়। বিগত ১৯৯২ সালে কর্পোরেশনের তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭১ কোটি টাকা।
প্রভিশনাল হিসেব অনুযায়ী ঐ বছর বিনিয়োগ থেকে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা যেখানে তার পূর্ববর্তী বছরে আয় হয়েছিল ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ১৯৯২ সাল নাগাদ কর্পোরেশন বিভিন্ন ধরনের দাবী বাবদ সম্পূর্ণ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় – ১৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে এবং কেবল ১৯৯২ সালেই পরিশোধ করেছে প্রায় ২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।