জীবন বীমার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য

জীবন বীমার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য – পাঠটি “বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা” বিষয়ের “জীবন বীমা” অধ্যায়ের একটি পাঠ। জীবন বীমা,  জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঝুঁকি তথা সম্ভাব্য ক্ষতির বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাকেই মোদ্দা কথায় জীবন বীমা বলা যায়।

[ এ ব্যবস্থায় বীমাগ্রহীতা নিজের অথবা অন্যের জীবনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঝুঁকিজনিত ক্ষতি প্রতিরোধ, লাঘব বা মুক্ত করার জন্যে বীমাকারী বা বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি লাভ করেন। তার জন্যে তাকে নির্দিষ্ট সময়ান্তর নির্ধারিত সংখ্যক কিস্তি বা প্রিমিয়াম দিতে হয়। প্রতিদানে বীমা প্রতিষ্ঠান বীমাদাবী পরিশোধ করে থাকেন – তাদের মধ্যে গঠিত চুক্তির মেয়াদ শেষে অথবা চুক্তি অনুযায়ী।]

জীবন বীমার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য

 

জীবন বীমার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য | জীবন বীমা | বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

 

জীবন বীমার সংজ্ঞাদান প্রসঙ্গে যেসব গ্রন্থকার, লেখক ও বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাঁদের কয়েকজনের অভিমত নিম্নে প্রদান করা হলো : – R.S. Sharma-র মতে “Life Insurance may be defined as a contract, whereby the insurer, in consideration of a premium, paid either in a lump-sum or in periodical Instalments, undertakes to pay, an annuity or a certain sum of money, either on the death of the insured or on the expiry of a certain number of years (জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যেখানে এককালীন অর্থ বা নির্দিষ্ট সময়াত্তর কিত্তি পরিশোধের প্রতিদানে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে অথবা নির্ধারিত বছর – সমূহের শেষে বীমাকারী বৃত্তি অথবা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন)”।

জীবন বীমার সংজ্ঞাদান প্রসঙ্গে স্যার জর্জ জেসেল বলেছেন 1 purchase of a reversionery sum in consideration of a present payment of money or as is generally the case of the It is a payment of an annuity during the life of the party Insuring ( এটি হলো অর্থের বা বীমাদাবীর অবিলম্ব পরিশোধের অথবা সাধারণভাবে বীমা গ্রহণকারী পক্ষের জীবৎকালে তাকে বৃত্তি পরিশোধের প্রতিদানে নির্দিষ্ট মেয়াদাস্তে একটি পুনরাবৃত্তি সম্পন্ন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্রয়)”।

ঘোষ ও আগরওয়ালা বলেছেন “Life insurance may be defined as a contract whereby one party undertakes to pay to another a certain sum of money on the latter’s death or on his attaining a certain age in exchange for a cash compensation known as premium which may be paid in a lump-sum or periodically (জীবন বীমা হলো এমন একটি চুক্তি যার মাধ্যমে এক পক্ষ এককালীন অথবা নির্দিষ্ট সময়াত্তর সেলামী বা কিস্তি আকারে নির্ধারিত পরিমান অর্থ পরিশোধের বিনিময়ে অপর পক্ষকে তার মৃত্যুতে অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদাস্তে নির্দিষ্ট পরিমানের অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করে)”।

M.N. Mishra-র মতে – “Life insurance may be defined as a contract, whereby the insurer in consideration of a premium undertakes to pay a certain sum of money either on the death of the insured or on the expiry of a fixed period (জীবন বীমা চুক্তি হলো এমন একটি চুক্তি যেখানে সেলামী বা কিস্তি পরিশোধের প্রতিদানে বীমাকারী বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদাস্তে নির্দ্দিষ্ট পরিমান অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন)”।

 

insurancegoln Google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে –

(ক) জীবন বীমায় সাধারণতঃ দু’টি পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। যথাঃ — বীমাকারী বা বীমা প্রতিষ্ঠান (Insurer or Insurance organisation) এবং (২) বীমাগ্রহীতা বা বীমাকৃত ব্যক্তি অথবা বীমাপত্রধারী (Insured or Insured person or Insurance policy-holder)। অবশ্য, বীমাগ্রহীতা ও বীমাকৃত ব্যক্তি একই ব্যক্তি নাও হতে পারেন।

(খ) বীমাকারী বীমাকৃত ব্যক্তির নির্দিষ্ট বয়স প্রাপ্তিতে বা মেয়াদাস্তে তাকে অথবা তার মৃত্যুতে তার মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিনিধিকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ পরিশোধে প্রতিশ্রুত হন যাকে বীমাদাবী বলা হয়। এই বীমাদাবী সাধারণতঃ একবারে পরিশোধিত হয়; তবে, কখনও কখনও বীমাপত্রের প্রকৃতি ও শ্রেনীভেদে তা কয়েকবারে অথবা নিদ্দিষ্ট সময়াস্তে বারবার পরিশোধিত হতে পারে। পক্ষান্তরে, বৃত্তি চুক্তির ক্ষেত্রে বীমাকারী বীমাগ্রহীতার কাছ থেকে বারবার কিত্তি না নিয়ে একবারে গ্রহণ করেন এবং বীমাকারীই বরং বারবার বৃত্তি প্রদান করে থাকেন।

(গ) বীমাগ্রহীতা বা বীমাকৃত ব্যক্তি বীমাদারী প্রাপ্তির প্রতিদান হিসেবে সাধারণতঃ বারবার ( বার্ষিক, ষান্মাসিক, ত্রৈ-মাসিক অথবা মাসিক) বা কখনও কখনও এককালীন বীমা কিস্তি বা সেলামী আকারে অর্থ প্রদান করে থাকেন।

(ঘ) জীবনের ক্ষতি যেহেতু নিরূপণ করা সম্ভব নয়, জীবন বীমায় ক্ষতিপূরণ প্রদান করাও সে কারণে প্রকৃতপক্ষে সম্ভব নয়। তাই, এখানে বীমাদাবীর পরিমান আগেই নির্ধারিত করা হয়। আর, একারণে জীবন বীমাকে ক্ষতিপুরণের চুক্তি বলা হয় না এবং বীমাকারী যা প্রদান করেন তাকে ক্ষতিপূরণ না বলে বরং বলা হয় দাবীপুরণ।

 

জীবন বীমার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য | জীবন বীমা | বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

 

(ঙ) জীবন-বীমার বিষয়বস্তু তথা বীমাযোগ্য স্বার্থ হলো জীবন (নিজের অথবা অন্যের)। উল্লেখ্য যে — জীবন-বীমাও অন্যান্য বীমার মতই কতিপয় সাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যেমনঃ-

(i) জীবন-বীমায়ও দু’টো পক্ষ থাকে,

(11) পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি গঠিত হয়,

(!!!) জীবন-বীমা চক্তিতেও বীমার বিষয়বস্তু বা বীমাযোগ্য স্বার্থ থাকে, (iv) জীবন-বীমায়ও অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা থাকে ইত্যাদি। তবে, এর কিছু স্বতন্ত্রতাও রয়েছে। যেমন:

→ জীবন-বীমার বিষয়বস্তু হলো জীবন যা অন্যান্য বীমায় নয়, → ইহা অন্যান্য বীমার মত ক্ষতিপূরণের চুক্তি নয় এবং

→ এক্ষেত্রে বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুতে অথবা নির্ধারিত মেয়াদান্তে বীমাদারী পরিশোধ করা হয় বিধায় জীবন-বীমা চুক্তি সাধারণতঃ দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে গঠিত ও সম্পন্ন হয় ইত্যাদি।]

অনুসিদ্ধান্তে বলা যায় যে—একপক্ষ (প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতা) কর্তৃক একক বা নির্ধারিত সংখ্যক নিদ্দিষ্ট পরিমাণের সেলামী বা কিস্তি প্রদানের প্রতিদানে অপরপক্ষ (বীমাকারী) কর্তৃক পূর্ববর্তী পক্ষকে নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে অথবা তার মৃত্যুতে তার মনোনীত ব্যক্তিকে নির্ধারিত পরিমান অর্থ বৌমাদাবী) পরিশোধের পারস্পরিক অঙ্গীকার তথা সম্মতিতে যে চুক্তি গঠিত ও সম্পাদিত হয় তাকেই জীবন-বীমা (চুক্তি) বলে।

 

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment