ঝুঁকি সম্পর্কীয় তথ্যাদি পাওয়ার উৎসসমূহ – পাঠটি “বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা” বিষয়ের “ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা” অধ্যায়ের একটি পাঠ। এ বিষয়ে ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নেই যে, মূলতঃ বীমা সেলামী নির্ধারণের জন্যেই ঝুঁকির পরিমাণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আর, সঠিকভাবে ঝুঁকি নির্ধারণের উপরই নির্ভর করে সঠিক কিস্তি নির্ধারণ তথা বীমা কারবারের সাফল্য।
এজন্যেই দরকার সঠিক উৎস ও তথ্যসূত্র থেকে সঠিকভাবে ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ পূর্বক যথার্থভাবে বিন্যস্ত করে ঝুঁকি নিরূপণ করা। এখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, তাহলে ঝুঁকি সম্পর্কীয় যথার্থ তথ্যাদি পাওয়ার উৎসগুলি কি কি বা কোন কোন্ উৎস ও সূত্র থেকে এতদসংক্রান্ত তথ্যাদি পাওয়া যায়। এ প্রশ্নের উত্তরে নিম্নে ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্যাদি পাওয়ার উৎসগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো :-
Table of Contents
ঝুঁকি সম্পর্কীয় তথ্যাদি পাওয়ার উৎসসমূহ
১। প্রস্তাবনা ছক বা নিদর্শপত্র (Proposal form):
প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতা বা বীমা গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রথমেই বীমাকারী বা বীমা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একখানা ছাপানো প্রস্তাবনা ছক বা নিদর্শপত্র প্রদান করা হয়। এই নিদর্শপত্রটিতে প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার ব্যক্তিগত পারিবারিক ও পেশাগত যাবতীয় তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করতে হয়। কোন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়নি, তথাপি যদি জানানো প্রয়োজন বা সংগত বোধ হয়, তবে তাও জানাতে হবে। কেননা, বীমাচুক্তি হলো – চূড়ান্ত, সন্ধিশ্বাসের চুক্তি। সে কারণেই, বীমাগ্রহীতাকে সমস্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ এবং সত্যভাবে বর্ণনা দিতে হবে; কোন বিষয় গোপন রাখা যাবে না এবং অতিরঞ্জিত করেও বলা যাবে না।
সুতারাং, প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার ঝুঁকি সম্পর্কে জানার জন্যে প্রস্তাবনা ছক বা নিদর্শপত্রই সবচেয়ে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
২। স্বাস্থ্য পরীক্ষকের প্রতিবেদন (Report of the Medical Examiner) :
চিকিৎসা নির্বাহী বা স্বাস্থ্য পরীক্ষক প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার ব্যক্তিগত পরিচিতি, স্বাস্থ্য ও শারীরিক গঠন সगान এক অবস্থার প্রত্যক্ষ পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তাবনাপত্রে প্রদত্ত বর্ণনার সাথে মিলিয়ে একটি রিপোর্ট প্রদান করে থাকেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রেক্ষিতে বীমাগ্রহীতার আয়ুকাল এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে ঘোষণা ও প্রতিবেদন প্রদান করেন, তাকে প্রত্যাশিত ও নির্ভুল বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। তবে, কখনও কখনও এর কিছু ব্যত্যয়ও লক্ষ্য করা যায়।
যাই হোক, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য পরীক্ষকের প্রতিবেদন ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্যাদি পাওয়ার আর একটি অন্যতম উৎস।
৩। বীমা প্রতিনিধির প্রতিবেদন (Agents Report) :
মা প্রতিষ্ঠানসমূহ বীমাগ্রহীতা সংগ্রহের জন্যে যেসব প্রতিনিধি নিয়োগ করে থাকে, তারা বিভিন্ন পরিচিত এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তিবর্গের কাছে বীমাপত্র বিক্রয়ের জন্যে গিয়ে আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা করেন এবং তাদের সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের কাছ থেকেও তাই প্রস্তাবিত বীমা’গ্রহীতাদের সম্পর্কে ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্যাদি পাওয়া যায়। কারণ, প্রতিনিধিগণ অনেক সময়ই হন পরিচিত ও সংশ্লিষ্ট। তবে, যেহেতু বীমাপত্র বিক্রয় করতে পারলেই তারা কমিশন পানসে কারণে অনেক সময় সঠিক তথ্য পরিবেশিত নাও হতে পারে। এজন্যে অনেক সময় প্রতিনিধিদের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়।
৪।পরিদর্শন প্রতিবেদন ( Inspection Report) :
আধুনিক ধীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব পরিদর্শন ষ্টাফ থাকে যাদের পরিদর্শক, মাঠ নির্বাহী বা উন্নয়ন কর্মকর্তা নামে অভিহিত করা হয়। এরা প্রতিনিধিদের বা প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে উপস্থিত তথ্যাদি নিরীক্ষা করে দেখেন, সেগুলো ঠিক আছে কিনা। পরিদর্শকবৃন্দ সাধারণতঃ আবেদনকারীর অজ্ঞাতসারেই আবেদনকারীর প্রতিবেশী, সহকারবারী ও কর্মচারীদের কাছ থেকে অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্যাদি নিয়ে আসেন। তাদের তথ্যই বেশী নির্ভরশীল হয়ে থাকে। কেননা, উক্ত চুক্তির ফলাফলে তাদের কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে না বা তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন না।
৫। প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার ব্যক্তিগত বন্ধু-বান্ধব (Pesonal friends of the proposed Insured) :
প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার ব্যক্তিগত বন্ধুদের কাছ থেকে বীমাগ্রহীতার নিজস্ব ও তার পারিবারিক বিভিন্ন গোপনীয় তথ্যাদি পাওয়া যেতে পারে। কেননা, তারা ঘনিষ্ঠতার কারণে অনেক খবরাখবর রাখেন। তবে, প্রকৃত বন্ধুরা অনেক সময় বন্ধুর ক্ষতি হতে পারে মনে করে সঠিক তথ্য নাও দিতে পারে।
৬। পরিচর্যারত বা পারিবারিক চিকিৎসক (Attending or Family Physician) :
প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার পরিচর্যারত বা পারিবারিক চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাভাবিক কারণেই অধিকতর নির্ভরযোগ্য ও নির্ভুল স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি পাওয়া যেতে পারে। কেননা, পারিবারিক চিকিৎসক উক্ত ব্যক্তি তথা তাঁর পরিবারের সকলের স্বাস্থ্যগত পূর্বাপর প্রায় সব খবরই রাখেন।
৭। চিকিৎসা তথ্য ব্যুরো (Medical Information Bureau) :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু কিছু উন্নত দেশে এ ধরনের ব্যুরো জনসাধারণের স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসার জন্যে কাজ করে। বীমাকারীগণ এ ধরনের ব্যুরোর সদস্য থাকেন এবং এখান থেকে সংশ্লিষ্ট কোন প্রস্তাবিত বীমাগ্রহীতার স্বাস্থ্যগত ইতিবৃত্ত (ইতিহাস) ও অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন যা সঙ্গত কারণেই সমধিক নির্ভরযোগ্য। আমাদের দেশে যদিও এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রতিষ্ঠান উদ্ভব লাভ করেনি।
৮। প্রতিবেশীগণ (Neighbours) :
কোন প্রস্তাবিত বীমা’গ্রহীতার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়া যায়। তবে, অনেক সময় পরশ্রীকাতরতা বা শত্রুতার কারণে কিছু ভুল তথ্যও দেয়া হতে পারে। অবশ্য, একটু সতর্কতার সাথে খেয়াল করলে হয়ত এর মধ্য থেকেও আসল তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
৯। কারবার সহযোগীগণ (Business Associates ) :
কারবার সহযোগীগণের কাছ থেকেও প্রস্তাবিত কোন বীমা’গ্রহীতার সম্পর্কে তথ্যাদি পাওয়া যায়। কেননা, ঘনিষ্ঠতা ও হৃদ্যতার জন্যে তারা অনেক খবরাখবর জানতে পারেন। যদিও, তাদের কাছ থেকে খবরাখবর জানা ততটা সহজ কাজ নয়।
১০। বাণিজ্যিক ঋণ অনুসন্ধান ব্যুরো (Commercial Credit Information Bureau) :
এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কারবারীদের আর্থিক ও সামাজিক খবরাখবর সংগ্রহ করে থাকে। কারবারীদের ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা বা আর্থিক অবস্থা ও সচ্ছলতা সম্পর্কে এ প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্যাদি সম্পর্কে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য ও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায় সংগত কারণেই। যদিও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখনও আমাদের দেশে প্রত্যাশিত পন্থায় বিকাশ লাভ করেনি।
এভাবে বিভিন্ন সূত্র থেকে ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। কেননা, তাতে সর্বাধিক তথ্যোদ্ধার সম্ভব। অধিকর, বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করলে তা হয় সমধিক যোগ।
আরও পড়ুনঃ
ঝুঁকি মূল্যায়ন (নিরূপণ) | ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা | বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা