আজকের আলোচনার বিষয় “প্রাকৃতিক ও নৈতিক বিপদসমূহ ” যা অগ্নিবীমা অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
প্রাকৃতিক ও নৈতিক বিপদসমূহ
অগ্নিকাণ্ড সাধারণত : দুধরনের বিপদের কারনে সংঘটিত হয়। যেমন : প্রাকৃতিক বিপদ (ফাসিইচঅল অজঅরড) ও নৈতিক বিপদ (Moral harzard)
১. প্রাকৃতিক ঝুঁকি ( Physical hazard) :
কোন সম্পত্তির বা বস্তুর আগুনে আক্রান্ত হবার সহজাত নাম প্রাকৃতিক বিপদ তথা ঝুঁকি। প্রাকৃতিক ঝুঁকি সম্পদের প্রকৃতি, ব্যবহার ও অবস্থানজনিত ঝুঁকিকে নির্দেশ কর। অতএব, বলা যায় সম্পত্তি বা বস্তুর অবস্থান, দাহাপ্রকৃতি, নির্মাণ দোষ, বিদ্যুৎ ও তাপ ব্যবহারের ত্রুটি ইত্যাদি হতে যে বিপদের সম্ভাবনা থাকে তাক প্রাকৃতিক বিপদ তথা ঝুঁকি বলে
সাধারণতঃ প্রাকৃতিক বিপদ হতে উদ্ভূত ক্ষতি প্রতিহত করা যায় না। প্রাকৃতিক বিপদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অভাবিত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ব্যবস্থা বলতে অগ্নি নির্বাপক সাজসরঞ্জামকে বুঝায়। কারণ, প্রাকৃতিক ঝুঁকি সংঘটনের সম্ভাবনা প্রতিহত করা যায় না, তবে ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় মাত্র। নীচে প্রাকৃতিক বিপদ সমূহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো—
(ক) সম্পত্তি বা বস্তুর দাহ্যপ্রকৃতি :
সম্পত্তি বা বস্তু যদি দাহ্য হয় বা এর মধ্যে দাহ্য উপাদান থাকে, তাহলে অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটনের সম্ভাবনা বেশী থাকে। কারণ, বস্তুর দাহ্য প্রকৃতি আগুনকে অতি সহজে আকর্ষণ করে।
(খ) ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাঠামা :
দালানকোঠা বা বাসগৃহ যদি এমনভাবে নির্মিত হয় যে, অগ্নি সংযোগে সহায়তা করে, তবে স্বভাবতঃই অগ্নি ঝুকি বেড়ে যায়।
(গ) ত্রুটিপূর্ণ তাপ ব্যবস্থা :
কোন দালান-কোঠায় যদি গ্যাস, কয়লা বা বিদ্যুৎ পরিচালিত শক্তির সাহায্যে কাজ চলে তাহলে সেখানে আগুনের সম্ভাবনা বেশী থাকে। যদি তাপ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহল এই ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
(ঘ) বিপজ্জনক প্রক্রিয়া :
বীমাকৃত প্রতিষ্ঠান বা সম্পত্তিতে যদি বিপদজ্জনক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যাবলী সম্পাদিত হয়, তাহলে অগ্নি ঝুঁকির পরিমাণ সেখানে অনেক বেড়ে যায়।
(ঙ) ত্রুটিপূর্ণ বিভাগ বা শাখা বিন্যাস :
বীমাকৃত বিষয়বস্তু যদি এমনভাবে বিন্যস্ত থাকে যে, তাতে অগ্নি বিস্তারে বিশেষ সুযোগ থাকে না, তাহলে স্বভাবতঃই অগ্নিঝুঁকি কমে যায়। যেমন : লম্বা গঠন না হয়ে যদি শাখা-প্রশাখাযুক্ত গঠন হয় তাহলে সহজে অগ্নি বিস্তার লাভ করতে পারে না। আর, এমনটা না হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
(চ) অগ্নি নির্বাপনের উপায়ের অভাব :
অগ্নিনিরোধক সরঞ্জামের অভাব থাকলে বা ফায়ার ব্রিগেড দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত হলে, অগ্নি সংঘটনের মাধ্যমে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

২. নৈতিক ঝুঁকি বা বিপদসমূহ (Moral hazards) :
যে সব বিপদ-বিপত্তি মানুষের স্বভাব, আচরণ, কার্যকলাপ এবং মানসিক প্রবণতা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত, তাকে নৈতিক বিপদ বলে। সাধারণতঃ এটি মানুষের এক ধরনের মনোবিক্রিয়ার অনাকাঙ্খিত বহিঃপ্রকাশের ফল। প্রাকৃতিক ঝুঁকির চেয়ে নৈতিক ঝুঁকিজনিত অগ্নি অপচয়ের পরিমাণই বেশী। প্রাকৃতিক ঝুঁকি অনুমান করা সম্ভব, কিন্তু আচরণ নির্ভর এই নৈতিক ঝুঁকি অনুমান করা অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় অসম্ভব। অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে এই নৈতিক ঝুঁকি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলতে গেলে এই ঝুঁকির জন্যই অগ্নিবীমা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক হতে পারছে না। নৈতিক ঝুঁকিগুলি নিম্নরূপ –
(ক) অন্যের দ্বারা অগ্নি সংযোগ :
সাধারণত: শত্রু বিদ্বেষ পরায়ণ প্রতিবেশী, কর্মচারী, বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ, খেয়ালী বা মানসিক বিকারগ্রস্ত লোক এই ধরনের অগ্নি-সংযোগের জন্যে দায়ী। উল্লেখিত পক্ষ ছাড়াও যে কোন ব্যক্তি যে কোন কারণে অগ্নি সংযোগ করতে পারে।
(খ) স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অগ্নি সংযোগঃ
লোভের বশবর্তী হয়ে সম্পত্তির মালিক নিজেই অনেক সময় এই অপকর্মটি করে থাকেন। এর প্রধান কারণ হল — অতিরিক্ত মুনাফা বা সুবিধা লাভের অত্যুগ্র দুরাকাঙ্খা এ জন্যে অনেক সময় গুদাম হতে পণ্য সরিয়ে না বিনষ্ট হওয়া পণ্যসহ মালিক নিজেই অগ্নি সংযাগে অগ্নি অপচয় বা ক্ষতি সংঘটিত করে। ব্যবসায়িক মন্দার সময় পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলেও এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়শঃই ঘটে থাকে। তবে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কারণ থাকে অনুদ্ঘাটিত।
(গ) বীমাগ্রহীতার ইচ্ছাকৃত অবহেলা :
অনেক সময় বীমাগ্রহীতা অগ্নির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সতর্কতা অবলম্বন করেন না এবং প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতিরও ব্যবস্থা রাখেন না। যন্ত্রপাতি থাকলেও অনেক সময় তার উপযুক্ত বা যথার্থ ব্যবহার করা হয় না। এ ধরনের ইচ্চাকৃত অবহেলা এক রকম অসাধুতারই পরিচয়। ব্যবসায়িক মন্দার সময় এই প্রবণতা বেশী দেখা যায়।
(ঘ) দাবী আদায়ের তীব্র লোভ :
দাবী আদায়ের লালসাও অগ্নিবীমার অপর একটি নৈতিক ঝুঁকি। বীমাকৃত সম্পদ যে উপায়ই হোক, নষ্ট করে সম্পত্তির মালিক ক্ষতিপূরণ আদায় করত প্রবৃত্ত হন। এতে অগ্নি ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি করে যা অন্যায় বা অসাধুতারই সামিল। বীমাগ্রহীতার এই লোভের জন্য প্রতি বছরই বীমা কোম্পানীগুলিকে বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হয়।
(ঙ) সতর্কতার অভাব :
এ ক্ষেত্রে বীমাগ্রহীতার উদ্দেশ্য অসৎ হয় না : কিন্তু, অভাব হয় প্রয়োজনীয় সতর্কতার। নিজের সম্পত্তিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটুক এটা না চাইলেও তিনি যেমন উপযুক্ত সতর্কতা গ্রহণ করেন না, পাশাপাশি কর্মরত কর্মীদেরও তদারকীর মাধ্যমে সতর্ক করেন না। বিপজ্জনক বস্তু ব্যবহারেও তার মধ্যে উদাসীনতা দেখা দয়। তাপ এবং বিদ্যুতের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তামূলক নিয়মকানুন পালন করেন না। প্রায় অর্ধেক অগ্নি দুর্ঘটনাই এ ধরনের কারণের ফল। প্রায় ৩০ বছর আগে আমেরিকায় এক জরীপের মাধ্যমে এরূপ তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
আরও দেখুনঃ