বীমার মৌলিক ও সাধারণ আধেয়সমূহ [ Basic & General Contents of Insurance ] নিয়ে আজকের আলোচনা। বীমা বিষয়ে লেখাপড়ার শুরুতেই মৌলিক ও সাধারণ আধেয়সমূহ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরী।
Table of Contents
বীমার মৌলিক ও সাধারণ আধেয়সমূহ
ভূমিকা [ Introduction ]
এ বিষয়ে সম্ভবতঃ ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নেই যে—মানুষের জীবন-জীবিকার প্রায় প্রতিটি পরতে পরতে মিশে আছে ঝুঁকি। অর্থাৎ, ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা যেন একটি চিরন্তন সত্যের মতই বিদ্যমান – এমনকি প্রত্যাশিতও যেন – মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। আসলে ঝুঁকি ছাড়া যেন জীবনের কোনো কথাই ভাবা যায় না। কেননা, জীবনে যদি ঝুঁকি বা কোন অনিশ্চয়তাই না থাকতো – মানুষের চলা, বলা, চিন্তা ও প্রকাশ কি তাহলে এমন হতো – থাকতো কি কোনো প্রতিযোগিতা? – যদিও বা থাকতো – তার অবস্থা বা পরিনতিই কি হতো? অনিশ্চয়তা না থাকলে থাকতো না কোন বিজয়ের উল্লাস অথবা আনন্দ – থাকতো না কোন আকস্মিকতার চমক অথবা বিস্ময়।
তাইতো, কার্ডিনাল নিউম্যান (Cardinal Newman) বলেছেন –
“There would have been no triumph in success if there had been no hazard of failure.“
– অর্থাৎ, জীবনে ব্যর্থতার অনিশ্চয়তা বা বিপত্তিই যদি না থাকতো, তাহলে তো কোন বিজয়োল্লাস অথবা বিজয়োৎসবই হতো না। আর এ কারণেই সম্ভবতঃ জীবনে এতো সব বিপদ-বিপত্তি, বিপর্যয় ও অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও মানুষ চায় আরও আকস্মিকতা ও অনিশ্চয়তার স্বাদ পেতে। তাইতো, আদিকাল ধরে যে দ্যূতক্রীড়া বা জুয়াখেলা মানব সমাজে প্রচলিত ছিল – আজও তা বহুরূপে বিদ্যমান রয়েছে পৃথিবী জুড়ে।
আর, এ জন্যেই Alexander Smith বলেছেন “Everything is sweetened by risk” – অর্থাৎ, সবকিছুই ঝুঁকি দ্বারা আস্বাদিত বা স্বাদ-সিক্ত হয়ে আছে। তবে, জীবন-জীবিকা সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান এ ঝুঁক্লিকে মানুষ যেখানেই একটু লাঘব করতে পেরেছে – সেখানেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে উন্নতি ও সমৃদ্ধি।
বলা বাহুল্য, ঝুঁকি মানুষের জীবন-জীবিকার পথে একটি অপরিহার্য অন্তরায় হয়ে আছে বলেই মানুষ তা থেকে অব্যাহতি ও উপশম লাভের দুর্নিবার আকাঙ্খায় উজ্জীবিত ও সচেষ্ট হয়েছে ক্রমান্বয়ে। তারই এক পর্যায়ে উক্ত ঝুঁকি লাঘব করা, দূর করা অথবা প্রতিরোধ করার পন্থা হিসেবে বীমার উদ্ভব ঘটে এবং প্রয়োজন হয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে তথা বাস্তবতার নিরীখে এখন তাহলে বলা যায়, জীবন-জীবিকা যেখানে আছে ঝুঁকিও সেখানেই থাকে; আর, ঝুঁকি আছে বলেই তা থেকে মুক্তি ও উপশম লাভের উপায় হিসেবে উদ্ভাবিত হয়েছে বীমা ব্যবস্থা।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে – “বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা”-কে গ্রন্থ হিসেবে যখন আখ্যায়িত ও সংজ্ঞায়িত করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই বলতে হয় – যে গ্রন্থে ঝুঁকি সংজ্ঞায়িতকরণ, নিরূপণ ও তা লাঘবকরণ বা দূরীকরণ অথবা প্রতিরোধকরণের পন্থা হিসেবে বীমা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা, সমালোচনা ইত্যাদি ধারাবাহিক ও সুসংবদ্ধভাবে অধ্যায়-বিন্যাসে সন্নিবেশিত হয়, তাকে “বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থপনা” বলা হয়। তবে বিষয় হিসেবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে “বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা আলাদা আলাদাভাবে এবং আরও সূক্ষ্মভাবে বর্ণনা ও নির্দেশের অবকাশ রাখে বিধায় নিম্নে প্রথমে ‘বীমা’ এবং পরে (দ্বিতীয় অধ্যায়ে) ‘ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা’-র সংজ্ঞা দান ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বীমার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য [ Definition & Significance of Insurance ]
শুধু মানুষ কেন জীব মাত্রেই চায় তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবনে ক্ষুধা, অকালমৃত্যু ও অন্যবিধ অনাকাঙ্খিত অথচ সম্ভাব্য বিপর্যয়জনিত অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে। তবে, মানুষ যেহেতু জীবন ও জগতের উৎস থেকে প্রাপ্ত সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে সমাজবদ্ধ ও সভ্য হতে পেরেছে – সে ক্রমাগতভাবে ঐসব অনিশ্চয়তাকে জয় করে চলেছে বিভিন্ন উপায় অবলম্বনে। তার একটি অন্যতম উপায় হলো আধুনিক কালের বীমা (Insurance) ব্যবস্থা।
চিন্তার ও সভ্যতার ক্রম-বিকাশের ধারায় মানুষ শুধু তার জীবন নয়, জীবনের জন্যে অপরিহার্য সম্পদ-সম্পত্তির নিরাপত্তা ও রক্ষা-ব্যবস্থার কথাও কম ভাবছে না। ফলে, আজ বীমা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ হচ্ছে বিভিন্নভাবে ও দ্রুতগতিতে। প্রসঙ্গতঃ অনুধাবনেয় যে – আজ বীমা একটি বহুল পরিচিত ও ব্যবহৃত ব্যবস্থা বটে; কিন্তু, প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাভাবিক কারণেই তা যে এমনটি ছিলো না, তা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। তাই বীমার উপরোক্ত বিভিন্ন অবস্থা, ক্রমবিকাশ ও পরিবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটেই বিভিন্নভাবে বীমার সংজ্ঞাদান ও বীমা প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ও চিন্তার আলোকে বিভিন্ন গ্রন্থকার, লেখক ও বীমা বিশেষজ্ঞ বীমা সম্পর্কে যেসব সংজ্ঞা ও অভিমত প্রদান করেছেন তার কয়েকটি নিম্নে বর্ণিত হলোঃ –
অধ্যাপক মার্ক. আর. গ্রীণি (Mark R. Greene):
বীমার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রাক ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, বীমাকে দু’টি প্রধান বিষয়ের আলোকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। যথাঃ – (১) সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদনের জন্যে একটি আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং (২) দু’টি পক্ষের মধ্যে বৈধ চুক্তি হিসেবে। কেননা, এ দু’টি দিকের কোন একটির উপর নির্ভর করে সংজ্ঞা প্রদান করলে তা সম্পূর্ণ হয় না। তাই, তিনি উক্ত দু’টি দিকের প্রতি লক্ষ্য রেখেই যে সংজ্ঞাটি দিয়েছেন তা হলো—
“Insurance is an economic institution that reduces risk both to society and to individuals by combining under one management a large group of objects so situated that the aggregate losses to which society is subject become predictable within narrow limits. Insurace is usually effected by and can be said to include all legal contracts under which the insurer. for consideration, promises to reimburse the insured for any loss suffered during the term of the agreement.”
অর্থাৎ, বীমা হচ্ছে – একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা একটি বিপুল বিধেয়-সমষ্টি (বিপদাশষ্কা/বিষয়াবলী/উপকরণাদি) – কে একটি ব্যবস্থাপনার অধীনে একত্রিত করে এমনভাবে স্থাপন বা বিন্যস্ত করে যাতে অতি সহজেই কোন সমুদয় ক্ষতি সম্পর্কে পূর্বানুমান করা যায় এবং এভাবে যা সংঘ/সমিতি ও ব্যক্তি – এ উভয়েরই ঝুঁকি লাঘব করে থাকে। স্বভাবতঃ চুক্তির মেয়াদকালীন সংগঠিত যে কোনো ক্ষতির জন্যে প্রতিদানের বিনিময়ে বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে অর্থ পরিশোধে বা ক্ষতিপূরণ দানে প্রতিশ্রুত হন – এমন সব চুক্তিকে বীমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এম.এন. মিশ্রও:
অন্য দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে বীমার সংজ্ঞা দান করেছেন। যথাঃ
(১) বীমার কার্যভিত্তিক সংজ্ঞা ( Functional Definition):
কার্যভিত্তিক সংজ্ঞায় তিনি বলেছেন যে –
“Insurance is a co-operative device to spread the loss caused by a particular risk over a number of persons, who are exposed to it and to agree to insure themselves against the risk.“
(নির্দিষ্ট কোন ঝুঁকিজনিত ক্ষয়-ক্ষতিকে, উক্ত ঝুঁকির আওতায় যেসব ব্যক্তি থাকেন এবং যারা উক্ত ঝুঁকির বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা বা নিষ্কৃত করতে চান, তাদের মধ্যে ঝুঁকি বন্টনের একটি সমবায় পন্থাকেই বীমা বলা হয়)।”
উক্ত সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে বীমা হলো (ক) ঝুঁকি বন্টনের একটি সমবায় পন্থা, (খ) নির্দিষ্ট ঝুঁকির বিরুদ্ধে বীমাকৃত ব্যক্তিবর্গের মধ্যেই ঝুঁকিকে ছড়িয়ে বা বন্টন করে দেয়ার পদ্ধতি, (গ) ক্ষতির সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে কোনো সংঘ বা মানবগোষ্ঠী (Society)-র প্রতিটি সদস্যের ক্ষতির অংশ গ্রহণ/বহন-এর নীতি এবং (ঘ) বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদানের প্রক্রিয়া।
(২) বীমার চুক্তি ভিত্তিক সংজ্ঞা (Contractual Definition):
চুক্তিভিত্তিক সংজ্ঞায় তিনি বলেছেন –
“Insurance is that in which a sum of money as a premium is paid in consideration of the insurers incurring the risk of paying a large sum upon a given contingeny“
– অর্থাৎ, বীমা হলো এমন কিছু (চুক্তি) যার মাধ্যমে কোন স্বীকৃত আকস্মিক বিপর্যয়ের জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে বীমাকারী কর্তৃক ঝুঁকি বহনের বিনিময়ে বা প্রতিদানে বীমা সেলামী বা কিস্তি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ পরিশোধ বা প্রদান করা হয়।
এ সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যেখানে:
(ক) প্রতিদান হিসেবে বা প্রতিদানে নির্দিষ্ট পরিমাণের বীমা কিস্তি বা সেলামী আরোপিত বা ধার্যকৃত হয়।
(খ) উক্ত প্রতিদানের বিপরীতে কিস্তি বা সেলামীগ্রহীতা (বীমাকারী) কর্তৃক একটি বিপুল পরিমাণের অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
(গ) পরিশোধটি হয় নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থে (যেমন: – সৃষ্ট বা সংঘটিত ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ বা বীমাপত্রের মূল্য – এর যে কোনটি হতে পারে)।
(ঘ) পরিশোধটি কেবলমাত্র কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনা সংঘটনের উপরই নির্ভর করে।
এম.কে. ঘোষ ও এ.এন. আগরওয়ালা:
আবার দু’টি দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বীমার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমনঃ
(১) প্রাথমিক বা প্রাচীন পদ্ধতি (Primary approach):
প্রাচীন ধরন মোতাবেক তারা বীমার সংজ্ঞায় বলেছেন যে—
“Insurance is a co operative form of distributing a certain risk over a group of persons who are exposed to it.“
অর্থাৎ, (যেসব ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন অথবা ঝুঁকির আওতাধীন থাকেন তাদের মধ্যে উক্ত ঝুঁকি বন্টনের সমবায় বা যৌথ প্রক্রিয়াকে বীমা বলে)
(২) আধুনিক পদ্ধতি (Modern approach):
আর, আধুনিক পন্থা অনুযায়ী বীমার সংজ্ঞায় তারা বলেছেন—
“Insurance in the new form may be defined as a contract whereby one party agrees to indemnify the other party against a loss which may arise, or to pay a certain sum of money on the happening of a certain event, in return of a compensation called premium.“
– অর্থাৎ, বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি বা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সম্ভাব্য কোন ক্ষতিপূরণ করে দিতে অথবা বীমাকিস্তি বা সেলামী নামে অভিহিত আর্থিক ক্ষতি স্বীকারের বদৌলতে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা দুর্ঘটনা সংঘটনের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট কোন ক্ষতিপূরণ করে দেয়ার জন্যে এক পক্ষ অপর পক্ষের কাছে প্রতিশ্রুত হন।
অধ্যাপক মর্গ্যান (Morgan):
অধ্যাপক মর্গ্যান এর মতে
“Insurance is the agreement of a community to consider the good of its individual members as common“
অর্থাৎ –
“সাধারণভাবে কোন একটি মানবগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রত্যেক ব্যক্তির কল্যাণ বিধানের প্রয়াসে বা চিন্তায় গঠিত সম্মতিই হলো বীমা”।
আরউইন এম. টেলর (Irwin M. Taylor):
আরউইন এম. টেলর তার Law of Insurance এ বীমার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন
“The insurance contract is an agreement by one party to assume another’s risk of loss in consideration for the payment of a premium, as part of a general scheme for the assumption of similar risk“.
“চুক্তি হলো সেলামী বা প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রতিদানে এক পক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষের উপর সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি গ্রহণ সংক্রান্ত সম্মতি যা এরূপ অনেক ঝুঁকির দায়িত্ব গ্রহণের সাধারণ প্রকল্প বা ব্যবস্থার অংশ বিশেষ”।
আবার, কারবারের বন্টন শাখা তথা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সংক্রান্ত অসুবিধা দুরীকরণের উপায়কেও বীমা বলা হয়।
মোট কথা, মানুষের জীবন অথবা সম্পদ-সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলার জন্যে অথবা ঝুঁকি লাঘব করতে কিংবা সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ গ্রহণ/ প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি সমবায় পন্থা অথবা এক পক্ষ কর্তৃক প্রদেয় অর্থের (সেলামী বা-কিস্তির) প্রতিদানে অপর পক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে বা নির্দিষ্ট ঘটনা সংঘটনে অথবা সম্ভাব্য দুর্ঘটনা সংঘটনে এককালীন বা একাধিক বারে নির্দিষ্ট পরিমাণের অথবা চুক্তিমত অর্থ পরিশোধের বা ক্ষতিপূরণ দানের প্রতিশ্রুতিতে সৃষ্ট সম্মতি তথা ব্যবস্থাই হচ্ছে বীমা।
আরও পড়ুন: