আজকের আলোচনার বিষয় “শস্য বীমা ” যা বীমা সংক্রান্ত কিছু বিষয় অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
শস্য বীমা
শস্য বীমা হলো সার্বিক কৃষি বীমার একটি অংশ মাত্র। কৃষি বীমার মধ্যে মূলত : শস্য, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পশু, কৃষকের পুঁজি, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদিকেও অন্তর্ভুক্ত করে। প্রকৃতপক্ষে শিল্পের ন্যায় কৃষি ক্ষেত্রেও নানা রকম ঝুঁকি বিদ্যমান। সর্বপ্রথম জার্মানীতে শস্য বীমার প্রচলন হয়। পরবর্তীতে আমেরিকা, জাপান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বীমা ব্যবস্থা বেশী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
শস্য বপন থেকে শুরু করে মজুদ যা বিক্রি পর্যন্ত নানা ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। শিলা- ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, আগুন, আত্মসাৎ, চুরি-ডাকাতি, যুদ্ধ, চাহিদার পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। শস্যের বীমা সাধারণত দু’ধরনের হয়। যেমন (১) নির্দিষ্ট ঝুঁকির শস্য-বীমা (Specific risk Corp Insurance) ও (২) সকল ঝুঁকি শস্য-বীমা |
নির্দিষ্ট ঝুঁকির শস্যবীমা – যেমন শিলা বৃষ্টি বীম, শস্য শিলাবৃষ্টির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই বীমার অধীনে ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়। সকল ঝুঁকির শস্য-বীমায় প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং নৈতিক সব ধরনের অন্তর্ভুক্ত করে। নির্দিষ্ট ঝুঁকির শস্য -বীমা বীমাকারীর দিক দিয়ে সুবিধাজনক। কারণ, সকল ঝুঁকির বীমার ক্ষেত্রে বিশেষ কতকগুলি অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন—ঝুঁকির পরিসংখ্যানের অভাব, খামার পরিদর্শনের অসুবিধা, নৈতিক ঝুঁকির উপস্থিতি ইত্যাদি। সকল ঝুঁকির বীমার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই প্রিমিয়ামের হার বেশী হয়ে থাকে।
কে আমাদের মত কৃষিপ্রধান দেশে শস্য-বীমা অপরিহার্য। কারণ, প্রতিবছরই বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, পঙ্গপাল ইত্যাদির কারণে অনেক শস্য নষ্ট হচ্ছে। শস্য-বীমা আমাদের কৃষকদের এসব ঝুঁকি হতে রক্ষা করতে পারে। আমাদের দেশে পরীক্ষামূলকভাবে শস্য-বীমা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯৭৭ সালে। প্রাথমিকভাবে ধান, পাট, গম ও আঁখকে এই বীমা স্কীমের আওতায় আনা হয়।
যেসব ক্ষেত্রে কৃষক নিজেই ঝুঁকি অনুমান করে তার প্রতিবিধান করতে পারে তাকে স্বয়ং বীমা বলে। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য এমনটা সম্ভব না হলেও অভিজ্ঞতা ও উপযুক্ত তথ্যের আলোকে ঝুঁকির অনেকটাই অনুমান করা যায়। এ ছাড়াও ঝুঁকি নিবারণ, ঝুঁকি বন্টন, ঝুঁকি সমবায় এবং ঝুঁকি হস্তান্তরের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো যায়। শস্য-বীমার সকল প্রকার ঝুঁকির জন্যে বীমা করা গেলেও জমির উর্বরতা বা অদক্ষতার কারণে ফসল না হলে তার জন্যে বীমা করা যায় না।
আমাদের দেশে শস্য-বীমা জনপ্রিয় করে তুলতে হলে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সরকার ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে পারেন। বেশ কিছু উন্নত দেশে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে।